চিঠি
মৌপ্রিয়া মিশ্র
মহিষাদল , পূর্ব মেদিনীপুর
মা দুর্গা !
তোমার দশ হাতে অস্ত্র থাকে,
তুমি অসুর নিধনের প্রতীক, শক্তির দেবী।
শক্তির এত রূপ, এত আভা তোমার,
তবুও জানো মা,
আমি একটা সাধারণ মেয়ে,
তোমার সেই শক্তির সামান্য এক বিন্দুও কোথাও খুঁজে পাইনি আমার জীবনে।
আমি গান গাইতাম মা।
তোমার ‘সারদা’ রূপের মতো আমি শব্দ আর সুরে বাঁচতে চাইতাম।
কিন্তু সংসার আমাকে সুর ছাড়াতে বাধ্য করেছে।
বিয়ের পর আমার স্বপ্নগুলো যেন পায়ের তলায় পিষে ফেলেছে ওরা।
স্বামী, শাশুড়ি কারোর চোখেই আমি ছিলাম না মানুষ,
ছিলাম যেন একটা ব্যবহারের বস্তু কাজের, সহ্য করার, চুপ থাকার।
মা, তুমি তো নারী, তুমি তো মা!
তুমি জানো সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন করে একটা মা নিজের কান্না গিলে নেয়।
তুমি বুঝবে নিশ্চয়ই
আমি কেন নিজেকে শেষ করতে পারিনি,
আমি কেন দিনের পর দিন নিঃশ্বাস নিতে নিতে ভিতরে ভিতরে মরেছি।
আজ আমি দুই কন্যা সন্তানের মা।
ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি জীবনটাকে টেনে চলেছি।
একটা ভাঙা সংসার থেকে নিজেকে আলাদা করেছি,
না, দম্ভ করে নয় !
শুধু একটু শান্তি, সম্মান আর নীরবতায় বাঁচার আশায়।
তোমার কাছে আমার প্রার্থনা কী, জানো মা?
তুমি যদি সত্যিই নারীর শক্তির প্রতীক হও,
তাহলে আমাকে সেই শক্তি দাও,
যাতে আমি মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি,
যাতে আমি আমার মেয়েদের সামনে কখনও লজ্জিত না হই।
আমার মেয়েদের এমন সমাজ দাও
যেখানে কন্যা হওয়া অপরাধ নয়, আশীর্বাদ হয়।
যেখানে স্বামী-শাশুড়ি বলে কারো উপর
মানসিক শাসন চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
তুমি যেভাবে অসুর বধ করেছিলে,
তেমনি আমার ভেতরের ভয়, অপমান আর অপরাধবোধগুলোকে শেষ করে দাও।
আমি আবার গান গাইতে চাই মা…
নিজের জন্য, আমার মেয়েদের জন্য,
আর এই সমাজের সব নিঃশব্দ নারীদের জন্য।
মা,
তুমি যদি শোনো,
তবে শুধু আশীর্বাদ দিয়ো না,
আমার কণ্ঠে একটু সাহস দিও ।
যাতে আমি অসহায় থেকে শক্তি হয়ে উঠতে পারি।
তোমার পদতলে,
একটি নিঃশব্দ মেয়ের কান্না ভেজা প্রার্থনা।
ইতি
তোমার অসহায় কন্যা
